অপরাধ প্রতিবেদক
নারায়ণগঞ্জের ৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের পুলিশ বডিগার্ড মামুন অস্ত্র গুলিসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে ছেড়ে অয়ন ওসমানের সাথে কক্সবাজারে আনন্দ ভ্রমণ করেছেন বলে জানিয়েছেন একটি গোয়েন্দাসংস্থা ।এদিকে সংসদ সদস্য শামীম ওসমান অনিরাপত্তার কারণে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে রাত্রি যাপন করেছেন বলে জানা গেছে।
গণমাধ্যম ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বডিগার্ড মামুন পূর্বে পুলিশের বিভিন্ন গোপন তথ্য ফাঁস করার অভিযোগে তার কাছ থেকে ওয়ারলেস প্রত্যাহার করে নিয়ে সতর্ক করেছিল পুলিশ প্রশাসন। বডিগার্ড মামুন আসলে কার শামীম ওসমানের না অয়ন ওসমানের! জানতে চায় নগরবাসী ও পুলিশ সদস্যরা। পুলিশ কনেষ্টবল বডিগার্ড মো. মামুন ক/১৮৪৯। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করে। তার গ্রামের বাড়ি বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জে। জন্ম ১৯৮৮ সালের ১৩ অক্টোবর। মামুন এইচ এস সি পযর্ন্ত লেখাপড়া করেন। ২০১৩ সালের ৪ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জে পুলিশ কনেষ্টবল হিসেবে যোগদান করে। এর পর থেকেই নারায়ণগঞ্জের ৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের বডিগার্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছে। মামুন পূর্বে দায়িত্বে ছিল চট্রগ্রামের এপিবিএনে।
কোন ব্যাক্তির নিরাপত্তার স্বার্থে দেহরক্ষী বা বডিগার্ড দেয়া হয় পুলিশ প্রশাসন থেকে। আর সেই বডিগার্ডের দায়িত্ব হচ্ছে উক্ত ব্যক্তি যতক্ষণ নির্বাচনী এলাকায় থাকবে ততক্ষণ তাহার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং সার্বক্ষণিক সাথে থাকবে এবং ডিউটি শেষে সরকারি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি পুলিশের অস্ত্রাগারে জমা দিতে হবে। কিন্তু শামীম ওসমানের বডিগার্ড মামুন কোন নিয়মনীতি ও উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ অমান্য করে দিন দিন বেপোরোয়া হয়ে উঠেছেন। যা আইনের পরিপন্থী। নারায়ণগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মধ্যে ৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম অন্যতম। তিনি অন্য সকল সংসদ সদস্যদের চেয়ে অনেকটাই আলোচিত। এছাড়া তিনি ওসমান পরিবারের একজন রাজনীতিবিদ। তিনি বিভিন্ন সময় আগে থেকেই বিভিন্ন বিষয়ে ইঙ্গিতও প্রদান করেন। এছাড়া তিনি পূর্বেই বলেছিলেন নারায়ণগঞ্জে জঙ্গি রয়েছে। নিজ নির্বাচনী এলাকাতে জঙ্গি ঘাঁটি রয়েছে শামীম ওসমানের এমন বক্তব্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান বলেছিলেন, সারা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দুটি জঙ্গিদের ঘাঁটি রয়েছে নারায়ণগঞ্জে।
জনপ্রিয় এই আওয়ামীলীগের নেতার বডিগার্ড এখন ছেলের সাথে থাকে। তবে নারায়ণগঞ্জের নাগরিক সমাজের প্রশ্ন সংসদ সদস্য কি শামীম ওসমান নাকি অয়ন ওসমান?
বডিগার্ড মামুন সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের সাথে সার্বক্ষণিক না থেকে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বৈধ আদেশ না মেনে পুলিশ লাইনে রিপোর্ট না করে সাংসদের ছেলে অয়ন ওসমনের সাথে সরকারি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি নিয়ে কক্সবাজারে ভ্রমনে গেছেন।
কনেষ্টবল বডিগার্ড মামুন সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের কাছে আসা বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ীসহ অনেকের কাছ থেকে শামীম ওসমানের অর্বতমানে নানা ধরনের অনৈতিক কার্যকলাপের সাথে জড়িত থাকে বলেও জানা গেছে।
এছাড়া নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইনের বডিগার্ড মামুনের সহকর্মী পুলিশ সদস্যরা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের সাথে বডিগার্ড হিসেবে থাকে। তাই বিভিন্ন সময় মামুন পুলিশ লাইনের পুলিশ সদস্যদের বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি দেখান। মামুন বলে যে বেশী বাড়াবাড়ি করবে শামীম ওসমানকে দিয়ে বদলী করিয়ে দিব।
এছাড়া পুলিশ লাইনের পুলিশ কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক)জানায়, মামুন একজন কনেষ্টবল কিন্তু সে পুলিশ পরির্দশককেও সম্মান করে না কারন সে সংসদ সদস্যের বডিগার্ড বলে। মামুন আমাদেরকেও বদলী করার জন্য হুংকার দেখায়। আর নব-পুলিশ কনেষ্টেবলরা আতংকে থাকে মামুনের কারনে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জের মানবাধিকার কর্মী বলেন, পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালনের পর অস্ত্রগারে অস্ত্র ও গুলি জমা দিতে হবে। যদি জমা না দিয়ে কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে সাথে নিয়ে যায় তাহলে এটা আইন বিরোধী এবং যে কোন সময় যে কোন ধরনের ঘটনা সংগঠিত হতে পারে। আর সংসদ সদস্যের বডিগার্ড ছেলে নিয়ে যাবে পুলিশ কি কারো ব্যক্তিগত পণ্য? আমরা আসা করবো এ ধরণের পুলিশ বডিগার্ডের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
অভিযোগের বিষয়ে পুলিশ কনেষ্টেবল বডিগার্ড মো.মামুনকে দৈনিক সংবাদচর্চার ফোনের মাধ্যমে রাত ৯ টা থেকে একাধিক বার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।
অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেন নি।
পুলিশ কনেষ্টেবল ও বডিগার্ড মামুনের বিষয়ে জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পুলিশ পরির্দশক সাজ্জাদ রোমান বলেন, বিধি মোতাবেক কেউ ডিউটি না করলে তাহার বিরুদ্ধে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ গ্রেফতার এনে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন করবে।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম দৈনিক সংবাদচর্চাকে জানান,তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
নিরাপত্তার দায়িত্বে থেকে অনুমতি ছাড়া অস্ত্র ও গুলি নিয়ে কক্সবাজারে যাওয়ার বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার হারু-অর রশিদের সাথে যোগাযোগ করা হলে জানা যায়, তিনি ছুটিতে বিদেশে আছে।
উল্লেথ্য যে, সরকারি আদেশে বাড়িতে ও গাড়িতে পুলিশ প্রহরা থাকে, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সংসদের স্পীকার, প্রধান বিচারপতি এবং এ সকল গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের চাহিদার ভিত্তিতে পুত্র ও কন্যাদের।
এছাড়া মন্ত্রী পরিষদ সচিব, মুখ্য সচিব এবং সচিবগনের শুধু মাত্র বাসায় থাকবে প্রহরা। এটর্নী জেনারেল ও বিচারপতিগন, (বিশেষ চাহিদার ভিত্তিতে)। এছাড়া সংসদের প্রতিনিধিত্ব করেন (সভাপতি)। সংসদ সদস্য (সুনির্দিষ্ট আবেদনের প্রক্ষিতে) বিদেশী রাষ্টদূত (বিশেষ আদেশক্রমে)। বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকগন। পুলিশ সুপার ও তধুর্দ্ধ কর্মকর্তাগন। সূত্র: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
এছাড়া পুলিশ সদর দফতর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র জানা আরো যায়, বর্তমানে সাদা পোশাকে ২৯২ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে গানম্যান দিয়ে নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। তবে এ সংখ্যা কখনও বাড়ে, কখনও কমে। সাংবিধানিক পদবিধারীগণ, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সচিব পর্যায়ের লোকজন ছাড়াও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা রয়েছেন সরকারি গানম্যান পাওয়ার তালিকায়, সূত্র: গনমাধ্যম।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছে, নীতি অমান্য করে অস্ত্র বহন করা দন্ডনীয় অপরাধ। যারা এ ধরণের অপরাধ করে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া উচিত।